শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৫ অপরাহ্ন
মোঃ শাহরিয়ার রিপন ঃ- চট্টগ্রাম ৪ জুলাই
চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন বলেছেন, কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ দ্রুত শুরু করার এখন শুধু সময়ের দাবি। এটা এখন উন্নয়নের পাশাপাশি প্রয়োজন হয়ে উঠেছে। আর এ জন্য স্পস্টভাবে বলা দরকার, কালুরঘাটে নতুন সেতু চট্টগ্রামবাসী কোন দয়া বা ভিক্ষা হিসেবে চান না। এখন চট্টগ্রামের মানুষের সাথে যা করা হচ্ছে তা প্রচারণার সামিল। চট্টগ্রাম থেকে দেশের রাজস্বের ৮০ ভাগ দেওয়া হচ্ছে কিন্তু চট্টগ্রামের মানুষ কি পেয়েছে। সুতরাং, এই নতুন ভাবে সড়ক কাম রেল সেতু চট্টগ্রাম বাসির ন্যায্য পাওনা।
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) চট্টগ্রাম নগর থেকে দক্ষিণে বোয়ালখালী সংযুক্ত করায কর্ণফুলীর কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ দ্রুত শুরু করার দাবীতে সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ কালে তিনি এসব কথা বলেন।
নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান এ সময় আরো বলেন, কর্ণফুলীর কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ নিয়ে আপামর চট্টগ্রামবাসী তথা দেশবাসী খুব হতাশ এখন। বিশেষ করে বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, মোহরা, পাঁচলাইশ, আনোয়ারা, কর্ণফুলী থানা এলাকা, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া সহ চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণ এই ইস্যুটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের রহস্যজনক গড়িমসি ও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে একধরণের মানসিক আঘাত পেয়েছেন। এখানকার প্রতিটি নাগরিক আশা করেছিলেন নতুন সেতুটির কাজ এর মধ্যে একদিন না একদিন শুরু হবে। অনেক আশা আর স্বপ্ন ছিল এটি নিয়ে, কিন্তু এখন তাদের প্রশ্ন এই নতুন সেতু কি আদৌ তারা তাদের জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দিহান হয়ে উঠেছে।
মনোয়ার হোসেন বলেন, পুরাতন সেতু মেরামত করাটা কোন অবস্থাতেই নতুন সেতুর বিকল্প হতে পারে না। মনে হচ্ছে, সুস্পষ্ট ঘোষণা ছাড়া নতুন সেতু নির্মাণটা আরও বিলম্বিত হতে পারে, অতীতের নাটকের পুনরাবৃত্তি হবে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বলেন কতৃপক্ষ এখন বলছেন, আপাতত: প্রায় ৮০ কোটি টাকা খরচ করে পুরাতন সেতুটিকে নাকি সংস্কার করা হবে যাতে করে চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল সার্ভিস ব্যাহত না হয়। এই বিষয়টি নিয়ে আগে কেন ভাবা হলোনা ? এসব না করলে চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল সার্ভিস চলবে না। সেই মেগাপ্রকল্পের মধ্যেই কালুরঘাট নতুন সেতু করার উদ্যোগ নেয়া হলে অনেক অর্থ ও সময় বেঁচে যেত।এটা প্রমান করে চরম গাফিলতি ও অবহেলা। এখন বলা হয়েছে ২০২৮ সালে সমাপ্ত করতে নতুন সেতুটির জন্য খরচ হবে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।
বলা হয়েছে ২০২৪ সালে শুরু হলে নাকি ২০২৮ সালে সমাপ্ত হবে নতুন সেতু। পদ্দা সেতু প্রকল্পের সাথে তুলনা করলে এর খরচ ও সময়সীমা নিয়ে আমাদের কিছু প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেন, ‘খরচ এত বেশি হওয়ার কথা না। আমি তথ্য জেনে তারপর মন্তব্য করতে পারব।’ এখানে সমন্বয়হীনতার ইঙ্গিত পাওয়া যায় |
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কালুরঘাট নতুন সেতু নিয়ে রেল সচিবের দেয়া সাম্প্রতিক বক্তব্য বিভ্রান্তিকর, দেশবাসীকে দেয়া আগের ঘোষণাগুলির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং প্রতিশ্রুতির বলখেলাপ। আমরা কি যে যা বলেন তাই কি মেনে নেবো ? ২০২০ সালে রেল মন্ত্রী এসে জরাজীর্ণ বর্তমান সেতুর উপর দাঁড়িয়ে বলেছিলেন ২০২১ সালে নতুন সেতুর কাজ শুরু হবে, ২৩-২৪ সালে শেষ হবে । এখন উনারই সচিব বলেছেন ২০২৮ সালে সেতু হবে ! এই কথা কিসের ভিত্তিতে আসলো? সাতগুণ বড় পদ্মা সেতু কতদিন লেগেছিলো? দোহাজারী -কক্সবাজার নতুন রেল যোগাযাগ শহরের সাথে সংযাগ করতে এতদিন পরে হঠাৎ কেন মনে পড়লো পুরাতনটাকে সংস্কার করার ?
অনেকটা আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, তিন বছর আগে শুরু করলে এতদিনে নতুন সেতু হয়েই যেতো সম্ভবত দুই তিন হাজার কোটি টাকার মধ্যে। আর ২০২৮ সালে করবে (যদি আদৌ হয়) ১৪-১৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করে। এইটা চূড়ান্ত হচ্ছে, ঐটা হয়নি, সামনের বছর শুরু হবে, এসব বাণী অনেক শুনলাম। ২০১৪ সালে গৃহিত এই নতুন সেতুর নির্মাণ উদ্যেগের পর থেকে একাধিকবার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। সেতুর নকশা বদল করা হয়েছে কয়েক দফা। এসব করতে করতে এভাবে কেটে গেছে ৯ বছর। সর্বোপরি ২০২৪ সালে এই কাজ শুরু হওয়ার কোনো গেরান্টি নেই। কাজেই এখন পুরো বিষয়টাই অনিশ্চিত আর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে উঠেছে।
এ সময় আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, এবিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে আমরা তথা চট্টগ্রাম বাসি বলতে চাই আগামী একমাসের মধ্যে কালুরঘাট নতুন সেতু নিয়ে সকল ধোয়াশা কাটিয়ে সেতু নির্মমান বিষয়ে দৃশ্যমান কর্মকান্ড শুরু হোক, অন্যথায় চট্টগ্রামবাসী কঠোর কর্মমসূচির মাধ্যমে দাবী আদায় করবে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে না। আগামী এক মাসের সময় দেওয়া হলো কতৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য।
কালুরঘাট নতুন সেতুর বিরুদ্ধে যারা কথা বলছেন তাদেরকে দেশের শত্রু উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সেতুর বিরুদ্ধে যারা কথা বলছে তারা বাংলাদেশের শত্রু, স্বাধীনতার শত্রু। প্রশাসনের ভিতরে একটা চট্টগ্রাম ভিত্তিক বিদ্বেষী কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত থেকে আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খালেদ, মহাসচিব মো. কামাল উদ্দিন, কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহবায়ক আব্দুল মোমেন, চট্টগ্রাম সুহৃদের সভাপতি মির্জা ইমতিয়াজ শাওন, ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক মনছুর আলম, প্রাবন্ধিক গবেষক কামরুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা মহিবুল্লাহ খান, গোলাম রসুল মান্নান, বোয়ালখালীর বিশিষ্ট সমাজ সংগঠক আকতার হোসেন ও তসলিম খাঁ সহ আরো অনেকে।